
প্রকাশিত: Sat, Apr 29, 2023 9:35 AM আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 12:53 PM
‘সিরিয়ালে’ রাজনীতি টেনে আনার প্রয়োজন দেখি না
ইমতিয়াজ মাহমুদ : মহানগর-২ দেখলাম। আপনারা এটা নিয়ে এতো উত্তেজিত কেন হলেন বুঝতে পারলাম না। পুলিশ, রাজনীতি, গোয়েন্দাÑ তাদের ষড়যন্ত্র, অসততা এসব নিয়ে নানা দেশে হাজার হাজার সিনেমা হয়, সিরিয়াল হয়। এটাতে উত্তেজিত হওয়ার কী আছে? আওয়ামী লীগ সমর্থকরা কেন এতো খেপলেন? একদম আশফাক নিপুণের দশ-এগারো বছরের পুরনো ফেসবুক পোস্ট বের করে সমালোচনা করতে নেমেছেন কেন? ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতামতের ক্ষেত্রে তিনি আওয়ামী লীগ বিরোধী হতে পারেন বা দক্ষিণপন্থী হতে পারেন বা যা ইচ্ছা তাই। তাতে আপনার কী? সেটার সঙ্গে এই ধারাবাহিকেরইবা কী সম্পর্ক?
দু’একজনকে আবার দেখলাম বিজ্ঞের মতো বলেছেন যে, এই ধারাবাহিক দেখেই নাকি বুঝা যায় যে বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা আছে। না ভাই। এই ধারাবাহিক তো সেরকম কিছু না। বরং আপনার চিন্তা দেখে মনে হচ্ছে যে না, বাংলাদেশে অনেকের মধ্যেই ফ্যাসিস্ট প্রবণতা আছে। কেন ভাই, একজন লোক একটা সিরিয়াল বানিয়েছে যেখানে পুলিশ গোয়েন্দা রাজনীতিবিদ খুনা-খুনি অসততা এইসব হচ্ছে গল্পের বিষয় বস্তু। এইটা দেখানোটা কী একটা বিশেষ কিছু? এতো স্পর্শকাতর হলে তো ভাই অসুবিধা। মানুষ গল্প, কবিতা, সিনেমা, নাটক এসব কি কিছুই করতে পারবে না?
আমি তো অন্যান্য ওটিটি প্লাটফরমে এমন সব সিনেমা সিরিয়াল এইসব দেখেছি যেখানে মন্ত্রীদের দেখানো হয় খুনি, গুন্ডা বা ধর্ষক। যেখানে পুলিশই হয় চোর। দেখানো হয় যে গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারাই ভিলেন বা ভিলেনের চর, এইরকম কতকিছু। আর এগুলো তো শুধু বোম্বের বা হলিউডের সিনেমা বা সিরিয়ালে দেখায় সেরকম তো নয়, ইউরোপের নানা দেশের সিরিয়ালে বা সিনেমাতেও এইসব দেখায়। এটাকে দোষের কী আছে? মানুষ গল্প বানাবে না? গল্পের সঙ্গে আপনি জানা ঘটনার মিল হয়তো পেয়ে যাবেন, তাতে কী? গল্প তো মানুষ অভিজ্ঞতা থেকেই লেখে, অভিজ্ঞতা ও কল্পনা জুড়ে দেয়।
আমাকে মাফ করবেন, যারা এই সিরিয়ালটাকে খুব ইয়ে করে একটা রাজনৈতিক ব্যাপার মনে করছেন, আপনাদের বিশেষ বুদ্ধিমান মনে হচ্ছে না। রূঢ় হয়ে গেল কথাটা, সেইজন্যে মাফ চাই, কিন্তু কথাটা সত্যি। আপনি যদি মনে করেন যে নাটকে সিনেমাতে আপনার দেশ বা আপনার নগরকে সবসময় একদম সুশৃঙ্খল সুশোভিত বেহেশতের টুকরার মতো দেখানো হবে, এটা তো একটা ফালতু চিন্তা আরকি। সৃজনশীল কাজে মানুষের কল্পনা বা চিন্তা যে কতদিকে কতভাবে যায়, আর সৃষ্টিকর্ম যে কত বিচিত্র হতে পারে। সেই হিসাবে মহানগর-২ এটা তো নিতান্ত ফর্মূলা সিরিয়াল আরকি। আশফাক নিপুণ ভাল বানিয়েছেন। হারুনকে আটকে রাখার ঘরটার যে সেট, সেটার রঙটা আমার ভালো লেগেছে। তবে ওদের বাথরুমটা একটু বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো বাহিনী বা সংস্থা এইরকম চকচকে পরিষ্কার বাথরুম রাখবে ভাবা কঠিন। বড়ুয়া ক্যারেক্টারটা ইন্টারেস্টিং। কিন্তু ডিলাক্স হোটেলে যাওয়ার পথে ওর বেবিট্যাক্সি যখন নষ্ট হয়, সেখান থেকে বড়ুয়া উল্টো দিকে দৌড় দিল কেন বুঝতে পারলাম না। বেবিট্যাক্সির নাক যেদিকে সেদিকেই তো দৌড় দেওয়ার কথা। নাকি? সাধারণভাবে ওটিটি প্লাটফর্মে যেরকম সব ভাষা শুনি সেইসবের তুলনায় আশফাক নিপুণের ব্যবহৃত ভাষা তো মনে হয় রূহ আফজা দিয়ে ধোয়া-সাফ সূতরা।
চৌধুরীর ছেলে চরিত্রটাতে যে অভিনয় করেছে তাকে দেখে এবং তার অভিনয়ে তাকে সেই লেভেলের বিত্তবান কারও বাচ্চা বলে মনে হয় না। বেচারার চেহারা ও শরীরে কেমন একটা মিডলক্লাস সিল মারা। হারুন চরিত্র যিনি করেছেন, তাঁর একটা নাটক দেখেছিলাম অনেক আগে, সেখানে তিনি ক্যারম খেলেন। সেই নাটকে তাঁর অভিনয় এবং আজকে তাঁর অভিনয় এই দুইয়ে কোনো পার্থক্য নেই। একদম এক, শরীরের ভাষা, উচ্চারণ, ম্যানারিজম, ডায়লগ ডেলিভারি-একইরকম। আর উড়াল সেতুটা যেখানে বড়ুয়ার সঙ্গে চৌধুরীর বাচ্চার দেখা হয়, গাড়ি নষ্ট হওয়া ইত্যাদি, সেই উড়াল সেতুটা তো জোড়া সেতু, দুই সেতুর মাঝখানে বেশ খানিকটা ফাঁকা। বড়ুয়া চট করে এক পার থেকে আরেকপারে গেলো কী করে?
এনিওয়ে। আপনারাও দেখেন, খারাপ হয়নি জিনিসটা। খুব অভিনব কিছু না, খুব ভয়ংকর কিছুও না, কিন্তু ভালো লাগবে। আর এইরকম একটা সিরিয়ালের জন্যে নানারকম রাজনৈতিক প্রসঙ্গ টেনে আনার কোনো প্রয়োজন দেখি না। যারা এগুলো করছেন, ওরা নিতান্ত নিজেদের অন্তরের স্বৈরাচারী প্রবণতা থেকে এইসব করছেন। ও ভাই, নাটক সিরিয়াল করবে না মানুষ। যে দেশের প্রেক্ষাপটে গল্প, সেই দেশের নানা কিছুর সঙ্গে তো গল্প খানিকটা মিলবেই। বাস্তবতার সঙ্গে তো মিলবেই, মিললেও গল্প তো গল্পই। গল্পের জন্যে এতো উত্তেজিত হওয়া ঠিক না। একটা ছোট ডায়লগ পছন্দ হয়েছ, টাকলা শালার চরিত্র বদলাইল না (বা সেরকম কিছু একটা)। আর একটা কৌতূহল আছে আমার মনে, বাংলাদেশে কি বোটক্সের ব্যবসা বেশ ভালো যাচ্ছে? ওহ, আরেকটা কথা, এপিসোডগুলো খুবই ছোট হয়ে গেছে। একেকটা এপিসোড অন্তত চল্লিশ মিনিটের মতো হলে ভালো হতো। টাইটেলসহ বিশ পঁচিশ মিনিটের ছোট ছোট এপিসোড হওয়ায় মনে হয় যেন ট্রেইলার দেখছি। লেখক: আইনজীবী। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
